পটুয়াখালী প্রতিনিধি: ‘জীবনে প্রথম কলেজে ভর্তি হয়েছি। অনেক স্বপ্ন আছিল মনে, কিন্তু ওই দিন ক্লাসে যেতে পারি নাই। কান্নায় বুক ফেটে গেছে। কিন্তু কিচ্ছু বলার ছিল না, কারণ আমি তো আর সবার মতো না যে ইচ্ছে হলেই যেখানে খুশি যেতে পারবো?’ কাঁপা গলায় কথাগুলো বলছিলেন অষ্টাদশী শারীরিক প্রতিবন্ধী লিমা আক্তার। সামাজিক শত প্রতিকূলতার মধ্যেও থেমে থাকেনি সে। জন্মের পর থেকে যে মেয়েটি দু’পায়ে হাটতে পারেনি কিন্তু সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শিক্ষক হয়ে অসহায়দের পাশে থাকতে চায় লিমা আক্তার। কাজ করতে চান প্রতিবন্ধীদের নিয়ে।
গলাচিপা উপজেলার কল্যাণকলস গ্রামের কলগাছিয়া ইউনিয়নের ইউসুফ হাওলাদারের মেয়ে। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে লিমা সবার ছোট। জন্ম থেকেই দুই পা দিয়ে হাটতে পারেনি লিমা। মা মাজেদা বেগম ও মেঝ বোন সাবিনাকে সঙ্গী করে নিজেকে একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন লিমা।
মেঝ বোন সাবিনার উৎসাহে দুই হাতে ভর করে গেছেন প্রাইমারির ও মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হয়েছেন খারিজ্জমা কলেজে। লিমা আক্তার এখন এসএসসি পাস করে নিজেকে এগিয়ে নিলেন আরেক ধাপ। ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চান। তাই নিজেকে তৈরি করছেন সেভাবেই।
লিমা আক্তার বলেন, ‘আমি একজন প্রতিবন্ধী। আমার বাবা গরিব মানুষ। টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কয়দিন বাদেই ফরম পূরণ করতে হবে। এখন কোথায় ফরম পূরণের টাকা পাবো, আবার পরীক্ষার সময় গলাচিপা সদরে থাকতে হবে সে টাকাই বা পাবো কোথায় তা জানি না। এ নিয়েও চিন্তা হয়।’ লিমা আরো বলেন, ‘কলেজের সহপাঠীরা আমাকে সহযোগিতা করে। এমনকি রাস্তায় চলাচল থেকে শুরু করে আমার যাতে সুবিধা হয় এ জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে থাকে বন্ধুরা। কলেজে না গেলে আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই হয়তো আর থাকতো না।
আমার প্রতিবেশিরা অনেকেই আমাকে পড়াশোনার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করতেন, কিন্তু সহপাঠীরা সব সময় আমাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী শারমিন সাহস জুগিয়েছে। নিয়মিত ক্লাসে যেতে পারি না বলে ও (শারমিন) প্রতিদিন ক্লাসের পড়াগুলো আমাকে জানিয়ে দেয়। আমি পড়াশোনা করে শিক্ষক হয়ে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতে চাই।’
লিমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী শারমিন বলেন, ‘লিমা গরিব ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। ওর জন্য কষ্ট হয়। লিমার কাজগুলো করে দিতে পারলে নিজের কাছে খুব ভালো লাগে।’
লিমার বাবা মো. ইউসুফ হাওলাদার বলেন, ‘আমি বুড়া অইয়া গেছি, আয়-বাণিজ্য নাই। আমার ছোট মেয়ে লিমা জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। দুই পা নাই, সবার মতো হাটতে পারে না। আমি গরিব মানুষ, মইররা (মরে) গেলে ও খাইবে ক্যামনে, কার কাছে থাকবে? মানুষের কতা হোনার (শোনার) পরেও কলেজে পড়ার খরচ দিতে পারি না। ওর দিকে চাইতে পারি না, আমার কষ্ট হয়।’
লিমার বিষয় জানাতে চাইলে কলাগাছিয়া কলেজের অধ্যক্ষ আফরো বেগম বলেন, ‘লিমা গরিব, মেধাবী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্রী। আমরা বিভিন্ন সময় ওর জন্য সহযোগিতা করেছি।’